রোহিঙ্গা রাজকন্যার কর্ণছেদন উৎসবে এক কেজি স্বর্ণ ও ৪৫ লাখ টাকা উপহার

বিশেষ প্রতিবেদক :

কেউ আনে স্বর্ণলংকার, কেউ আনে রূপা, আর কেউ আনে টাকার থলে। কেউ কেউ ছাগলও নিয়ে আসেন। এভাবে দলে দলে অতিথিরা আসেন নানা উপঢৌকন নিয়ে। এভাবে স্বর্ণলংকার স্তুপে পরিণত হয়। একইভা্েব টাকা হয় বস্তা ভর্তি। আর রাজকীয় উৎসবে পালন করা হয় এই কর্ণছেদন অনুষ্ঠান।

শুনলে মনে হবে আরব্য উপন্যাসের কোন গল্প। কিন্তু তা নয়। ঘটনাটি হচ্ছে টেকনাফের দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদের কিশোরী কন্যার কর্ণছেদন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা এভাবে উপহার নিয়ে আসেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে এক কেজি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪৫ লাখ টাকাসহ আরো নানা উপহার।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ শুক্রবার রাতে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন-‘ এ ঘটনার পর থেকে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছি রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ ডাকাতকে ধরার জন্য। কিন্তু সে তার বিশাল অস্ত্রধারি ডাকাত বাহিনী নিয়ে টেকনাফের গহীন পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাই ধরা পড়ছে না।’ ওসি বলেন, কর্ণছেদন অনুষ্টানে এরকম উপহার সামগ্রী উঠার বিষয়টি এলাকাবাসীও জানেন।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, গত ২২ আগষ্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনই রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদ তার কন্যার কর্ণছেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এতে গরু-ছাগল জবাই করে আয়োজন করা হয় বড় ভোজ অনুষ্ঠানের। আমন্ত্রিতদের সবাই রোহিঙ্গা ডাকাত, সন্ত্রাসী এবং রোহিঙ্গা ইয়াবা কারবারির দল।

সাবেক এমপি আবদুর রহমান জানান, এই রকম রাজকীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা রোহিঙ্গাদের জন্য কোন ব্যাপার না। এখানে সবাই এখন ধনাঢ্য। অনেক রোহিঙ্গা আড়াই লাখ টাকার বেশি মুল্যে গরু কোরবানি দিয়েছে। এই কর্ণছেদন অনুষ্ঠানে স্বনামধন্য শিল্পীদেরও মোটা অংকের টাকা দিয়ে আনা হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ জানান, ১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ হ্নীলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জাদিমুরা এলাকায় এসে প্রথমে বাসা ভাড়া নিয়ে ছিলেন। ধীরে ধীরে সেখানেই জমি কিনে ঘরবাড়ীর মালিক হয়ে পড়ে। এপাড়ে আশ্রয় নেয়ার পর ওপারের রোহিঙ্গাদের নিয়ে গড়ে তুলে সীমান্তের বিশাল ডাকাত বাহিনী।

এই ডাকাত বাহিনী অপহরণ, ডাকাতি, সন্ত্রাসী, ছিনতাই, মানব পাচার এবং সর্বশেষ সীমান্তের এক চেটিয়া ইয়াবা কারবারও হাতে নেয়। ইত্যবসরে দুই বছর আগে আসা রোহিঙ্গা ঢলের পর নুর মোহাম্মদ ডাকাতের প্রতাপ কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়ে যায়। এলাকার ৫/৬ টি রোহিঙ্গা শিবির, টেকনাফের বিস্তৃত পাহাড়, সীমান্তের নাফনদ ও নাফনদের ওপারের রাখাইনের অভ্যন্তরে থাকা ইয়াবা কারখানা ও গবাদি পশুর বাজার সহ একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে নেয় তারা। এসব কারনেই বাহিনীর সদস্যরা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।

থানার ওসি আরো জানান, নুর মোহাম্মদ কমান্ডার হবার কারনে তার বাড়ীতে ভোজের দাওয়াতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী, ডাকাত ও ইয়াবা কারবারিরা সবাই দলে দলে অংশ নেয়। তার বাড়ীর ভোজের অনুষ্ঠান থেকে গিয়েই ২২ আগষ্ট প্রত্যাবাসন ভেস্তে যাবার রাতে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা খুন করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে।

টেকনাফ থানার ওসি বলেন, রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ ডাকাতের ৪ টি বাড়ী রয়েছে। তন্মধ্যে একটি পাকা ভবন, একটি দু’তলা টাওয়ার, একটি টিনের ঘর এবং অপরটি বাগান বাড়ী। রোহিঙ্গারাই তাদের ‘ওস্তাদের’ কন্যার কর্ণছেদন অনুষ্ঠানে এক কেজির মত স্বর্ণালংকার উপহার সামগ্রী হিসাবে এবং সেই সাথে নগদ টাকা দেয় রিতীমত প্রতিযোগিতা দিয়ে।

এসব কারণেই উপহারের পরিমাণ এরকম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। ডাকাত নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ সহ অনেক মামলা রয়েছে এবং সে একজন মোষ্ট ওয়ানটেড আসামী।